ধর্ম ও দর্শন ডেস্ক : পুরুষদের জন্য টাখনু (পায়ের গিরা)-র নীচে জামা, পায়জামা, প্যান্ট, লুঙ্গি ইত্যাদি কাপড় পরা সর্বাবস্থায় (নামায কিংবা নামাযের বাইরে) হারাম। এ সম্পর্কে বহু হাদীস শরীফে কঠিন শাস্তির ধমকি বর্ণিত হয়েছ। তন্মধ্যে, হযরত আবূ হুরাইরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “লুঙ্গি বা কাপড়ের যে অংশটুকু টাখনুর নীচে থাকবে তা জাহান্নামে যাবে”। অর্থাৎ, পরিধানকারী এই অপরাধে জাহান্নামী সাব্যস্ত হবে। (বুখারী শরীফ হা: নং ৫৮৮৭)হযরত আবু হুরাইরাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টিতে তাকাবেন না, যে লুঙ্গি, কাপড় ইত্যাদি অহংকারবশতঃ টাখনুর নীচে পরিধান করে।” (বুখারী ২:৮৬১-৮৬৩, আবু দাউদ শরীফ ২:৫৬৬, ইবনে মাজাহ শরীফ ২৫৫)
উল্লেখ্য পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করাটাই অহংকার এর আলামত, চাই তার অন্তরে যাই থাকুক সুতরাং এ কথা বলা অনর্থক যে আমি টাখনুর নীচে কাপড় পরলেও আমার অন্তরে কোন অহংকার নেই। এটা সেই ভিত্তিহীন দাবীর অনুরূপ, যে আমি নামায না পড়লেও আমার ঈমান ঠিক আছে অথচ হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল সে কুফুরী কাজ করল। (মুসলিম শরীফ হা: নং ৮২, আবূ দাউদ শরীফ হা: নং ৪৬৭৮)
টাখনুর নীচে সাধারণত: অহংকারী ব্যক্তিরা পোশাক পরিধান করে থাকে। এ হিসাবে কিছু সংখ্যক হাদীসে অহংকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অহংকার ব্যতীত টাখনুর নীচে কাপড় পরা যাবে। এ ব্যাপারে অনেক মানুষ ভুলের মধ্যে আছে। টাখনুর নীচে কাপড় পড়লে তার অন্তরে যাই থাকুক এর দ্বারা অহংকার প্রকাশ পায় তাই সর্ব অবস্থায় পুরুষদের জন্য টাখনুর নীচে একমাত্র মোজা ব্যতীত অন্য কোন পোশাক পরা হারাম।
হযরত আবু সাঈদ রাযি. বর্ণনা করেন আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: মুমিনের কাপড় নিসফে সাক (অর্থাৎ, হাঁটু ও টাখনুর মধ্যবর্তী স্থান) পর্যন্ত, তবে নিসফে সাকের নীচে টাখনুর উপর পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরায় কোন অপরাধ নেই। (আবু দাউদ শরীফ হা: নং ৪০৯৩, ইবনে মাজাহ শরীফ হা: নং ৩৫৭৩)
তাছাড়া সাহাবায়ে কিরাম রাযি. থেকেও নিসফে সাকের নীচে টাখনুর উপর পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা প্রমাণিত আছে। (বুখারী শরীফ হা: নং ৪৪২, মুসলিম শরীফ হা: নং ৪৩১)
সুতরাং, নিসফে সাক পর্যন্ত কাপড় পরিধান করা সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং টাখনুর উপর পর্যন্ত পরিধান করা জায়েযের সর্বশেষ সীমা, তবে এ অবস্থায় খুবই সর্তক থাকতে হবে যাতে সামান্য অসাবধানতার কারণে কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলে না যায়। প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব যে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধানের উপর কায়েম থাকা এবং শরী‘আতের সীমা রেখা কোন অবস্থায় লঙ্ঘন না করা।
বি.দ্র: টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে প্যান্ট-পায়জামা ইত্যাদি পরা বিধর্মীদের শিক্ষা ও তাদের কৃষ্টি-কালচারের অন্তর্গত। এই ধরণের পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করলে, গায়রে কাওমের অনুসরণ হয়। যার দ্বারা আমাদের দীনি চেতনার অভাব প্রকাশ পায়। তাই মুসলমানদের এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা অতীব জরুরী। (ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪:১২২, ইমদাদুল আহকাম ২:১৭৯, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ২:১৪০, ফাতাওয়া রহীমিয়া ৭:২৮৪-২৮৮, তাক’মিলায়ে ফাতহুল মুলহিম ৪:১২৩)
আল্লাহ পাক আমাদের সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। আমীন !